শিশু খেতে চায় না?

অনেক মা-বাবাই অভিযোগ করেন, শিশু ঠিকমতো খেতে চায় না। আসলে কি বিষয়টি সঠিক? নাকি এটি মা-বাবার মনের ভ্রান্ত ধারণা?
শিশুর খাওয়ার বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৯১২তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. আবু সাঈদ শিমুল। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : অনেক মা অভিযোগ করেন শিশু খেতে চায় না। এই অভিযোগের সত্যতা কতখানি? আসলেই কি শিশু খেতে চায় না?
উত্তর : আসলে সন্তানদের নিয়ে মা-বাবার উদ্বেগ চিরন্তন। আপনার যদি পাঁচ কেজি ওজনও বেড়ে যায়, মা হয়তো বলবেন ‘বাবা তুই শুকিয়ে গেছিস’।
প্রশ্ন : তবে অনেক শিশু তো খেতে চায় না। খাবার নিয়ে শিশুর পেছন পেছন দৌড়াতে হয়। এটি কেন?
উত্তর : আসলে প্রথম দিকে একটি বিজ্ঞান রয়েছে। এই উদ্বেগের পেছনে কিছু কারণও রয়েছে। একটি শিশু জন্মের সময় ৫০ সেন্টিমিটার হয়, তার পর থেকে প্রথম বছরে তার ওজন প্রায় তিনগুণ বাড়ে। এরপরের বছরে ২৫ সেন্টিমিটার বাড়ে। এরপরের বছরে ১২ সেন্টিমিটার বাড়ে। তারপরের বছর ৬০ সেন্টিমিটার বাড়ে। সাত বছরের পর থেকে প্রতিবছরে পাঁচ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বাড়ে। ওজন হয়ে যায় তিনগুণ। একজন বাচ্চার জন্মের সময় ওজন হয় তিন কেজি, কিন্তু এক বছরে হয়ে যায় ১০ কেজি। দ্বিতীয় বছরে গিয়ে মায়েরা ভাবে প্রথম বছরে যেভাবে বাড়ছিল এখন তো সেভাবে বাড়ছে না। আপনার বা আমার ওজন কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে হয়তো একই রকম রয়েছে। এক কেজি বাড়লে আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে যাই। বাচ্চাদের কিন্তু একসময় গিয়ে সে ওজনটা আর সে রকম বাড়ে না, সেটা হয় শারীরিক কারণে। তার যে প্রদত্ত জীবন, নিয়ম অনুযায়ী কিন্তু সে বাড়ে না। তবে মা-বাবারা সেখানে গিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।
প্রথম বছরে যদি ২৫ সেন্টিমিটার বাড়ে আর আমরা এখনো যদি সেই নিয়মে বাড়তেই থাকি, তাহলে আমার উচ্চতা হয়ে যায় ১০-১৫ ফিট। সেই জন্য দেখা যায় যে ১৮ বছরের পর থেকে আমরা সেভাবে বাড়ি না। এখানে বাবা-মা ভাবেন, তার বোধ হয় খাওয়াদাওয়াতে কমতি হচ্ছে- এই জন্য বাড়ছে না।
আরেকটি বিষয়, প্রথমে আমরা ছয় মাসে আট থেকে ১০ বার বুকের দুধ খাওয়াই। কিন্তু এর পর থেকে তাকে কম খাওয়াতে হবে। আমরা দেখি ছয় মাস থেকে আট মাসে দিনে মাত্র তিনবার খাওয়ালে যথেষ্ট। আর আট থেকে ১১ মাস পর্যন্ত মাত্র তিনবার আধা বাটি কোনো একটি শক্ত খাবার খাওয়ালেই যথেষ্ট। এর পর থেকে পুরো বাটি মাত্র তিনবার খাওয়ালেই যথেষ্ট। তবে তাদের মাথায় যে রয়ে গেছে আট থেকে ১০ বার খাওয়াতে হবে, তাই তারা বারবার খাবার নিয়ে ছুটতে থাকেন।
এতে একসময় খাবারের বাটি দেখলেই বাচ্চারা কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। সে বাটির মধ্যে সুস্বাদু খাবার রয়েছে কি না সেটি কিন্তু তারা আর চিন্তা করে না। কারণ, জোর করে খাওয়াতে খাওয়াতে খাবার নিয়ে একধরনের ভীতি জন্মে যায়।
শিশুর ব্যক্তিত্ব ও শরীরের চাহিদাকেও কিন্তু মূল্য দিতে হবে। এক বছর পর থেকে যেহেতু তার চাহিদা কমে যাচ্ছে, তাই সে কী খাবে, খাবে না, কখন খাবে এসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।