নবজাতকের জন্ডিস, কারণ কী?

জন্ডিসের সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। নবজাতকের ক্ষেত্রে এই জন্ডিসের কারণ এবং চিকিৎসা বড়দের থেকে ভিন্ন। নবজাতকের জন্ডিস বলতে আমরা সাধারণত ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিসকেই বুঝি।
এ ক্ষেত্রে আনকনজুগেটেড বিলিরুবিন (প্রতিনিয়ত হিমোগ্লোবিন ভেঙে হলুদ রঙের যে বর্ণকণিকা তৈরি হয়) স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি থাকাতে তার হলুদ রংটি চোখে ও শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে দেখা যায় এবং এর মাত্রা ১০-১২ মিলিগ্রামের বেশি থাকে, একেই জন্ডিস বলে। সাধারণত জন্মের ৪৮ ঘণ্টা পর পর এটা দেখা যায়।
কেন নবজাতকের জন্ডিস হয়
নবজাতকের লোহিত কণিকায় যে হিমোগ্লোবিন থাকে, তা বড়দের থেকে গুণগতভাবে আলাদা এবং পরিমাণেও বেশি থাকে। এই হিমোগ্লোবিন আয়ুষ্কাল কম, তাই এরা তাড়াতাড়ি ভাঙে এবং অধিক পরিমাণে বিলিরুবিন তৈরি করে। এই অতিরিক্ত বিলিরুবিন নবজাতকের অপরিণত ও অপরিপক্ব লিভার দ্রুত নিষ্কাশন করতে পারে না। এতে রক্তে এই মাত্রা বেড়ে যায়। আবার লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে আসে এবং সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে সম্পূর্ণ মিলিয়ে যায়। স্বাভাবিক ধরনের এই জন্ডিস ছাড়া আরেক ধরনের অস্বাভাবিক বা প্যাথলজিক্যাল জন্ডিস রয়েছে।
নবজাত শিশুদের দুই-তৃতীয়াংশেরই ক্লিনিক্যাল জন্ডিস হয়ে থাকে। এর কারণ তিন ভাগে বিভক্ত করা যায় :
১. জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে, যেমন :
ক. হিমোলাইটিক ডিজিজ—তার মধ্যে আরএইচ, এবিও ইনকমপিটিবিলিটি (মা ও নবজাতকের রক্তের ভিন্নতাজনিত সমস্যা)।
খ. ইন্ট্রোইউটেরাইন ইনফেকশন, অর্থাৎ মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় ইনফেকশন, যেমন—টকসোপ্লাজমোসিস, সাইটোমেগালো ভাইরাস, রুবেলা, সিফিলিস ইত্যাদি।
গ. গ্লুকোজ সিক্স ফসফেট ডিহাইড্রোজিনেস ডেফিসিয়েন্সি বা স্বল্পতা।
২. জন্মের ২৪-৭২ ঘণ্টার ভেতর, যেমন :
ক. ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস বেশি হয়, যদি প্রিম্যাচিওর বা অপরিণত শিশু হয়, বার্থ এসফ্যাকসিয়া (জন্মকালীন শ্বাসকষ্ট), এসিডেসিস, হাইপোথারমিয়া, হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে গ্লুকোজের স্বল্পতা) ক্যাফাল হেমাটোমা ইত্যাদি থাকে।
খ. যদি ইনফেকশন থাকে।
৩. জন্মের ৭২ ঘণ্টা পর হয়, যেমন :
ক. সেপটিসিমিয়া, খ. নিউনেটাল হেপাটাইটিস, গ. বিলিয়ারি এন্ট্রিসিয়া, ঘ. ব্রেস্ট মিল্ক জন্ডিস, ঙ. হাইপোথাইরয়েডিম, চ. গ্যালকোটেসিমিয়া, ছ. সিস্টিক ফাইব্রোসিস, জ. কনজেনিটাল হাইপারট্রফিক পাইলোরিক স্টেনোসিস। এগুলো জন্মগত ত্রুটি ও রোগের নাম।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ।