শিশুদের যেসব ক্যানসারে সার্জারি প্রয়োজন
ক্যানসার কেবল বড়দেরই নয়, শিশুদেরও হয়। শিশুদের কিছু কিছু ক্যানসারের চিকিৎসায় সার্জারির প্রয়োজন পড়ে। শিশুদের ক্যানসার ও তার সার্জিক্যাল চিকিৎসা নিয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩০৫৪তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. নজরুল ইসলাম আকাশ। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জারি বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : শিশুদের বেলায় কী ধরনের ক্যানসার হয়, যার সার্জিক্যাল চিকিৎসা রয়েছে?
উত্তর : বড়দের যেমন ক্যানসার হয়, ছোটদেরও ক্যানসার হয়। তবে বড়দের যেই মাত্রায়, যেই ধরনের ক্যানসার হয়, শিশুদের সেই রকম হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুরা যেসব ক্যানসার নিয়ে আমাদের কাছে আসে, এর মধ্যে কিডনির এক ধরনের ক্যানসার রয়েছে। কিডনির ওপর একটি ছোট অঙ্গ থাকে, যাকে বলা হয় এড্রেনাল গ্রন্থি। এই এড্রেনাল গ্রন্থিতে এক ধরনের স্নায়ু টিস্যু থাকে। টিস্যুর একটি ক্যানসার হয়। নিউরোব্লাস্টোমা কেবল এড্রেনাল গ্রন্থি নয়। আর যেখানে যেখানে এই ধরনের টিস্যু রয়েছে, সেসব জায়গায় হতে পারে। এরপর রেবডোমায়া সারফোমা, মাংসপেশির এক ধরনের ক্যানসার হতে পারে। ওইংস সারফোমা হতে পারে। এরপর মস্তিষ্কে হতে পারে মেরুলোব্লাস্টোমা, গ্যাংলিওমা-এগুলো হতে পারে। সাধারণত এগুলো হলো সলিড টিউমার। এ ছাড়া যেমন লিম্ফোমা, ব্লাড ক্যানসার এগুলো বাচ্চাদের হয়।
প্রশ্ন : ব্লাড ক্যানসারে তো আর সার্জিক্যাল চিকিৎসা নেই?
উত্তর : না, নেই।
প্রশ্ন : শিশুদের মধ্যে কোন ক্যানসার কোন বয়সে বেশি হয়?
ক্যানসারের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। এরপরও কিছু কিছু বড়দের ক্যানসারের প্রি ডিসপোজিং ফ্যাক্টর বা রিস্ক ফ্যাক্টর রয়েছে। শিশু ক্যানসারের এ রকম কিছু রয়েছে কী?
উত্তর : শিশু ক্যানসারেরও একই রকম কিছু ঝুঁকি রয়েছে। কিছু ক্যানসার সাধারণত বয়স ভেদে দেখা যায়, এদের আধিক্য বেশি। কিন্তু সবসময় যে এই বয়সে হবে বা হবে না, এমন কোনো কথা নেই। বাচ্চারা জন্মের সঙ্গে সঙ্গে কিছু ক্যানসার নিয়ে আসতে পারে। অর্থাৎ যেটা ওই সময় বের করা যায় না। আবার কিছু ক্যানসার দুই বছরের মধ্যে বোঝা যায়। আবার দুই বছর থেকে চার বছরের মধ্যে কিছু ক্যানসার বেশি হয়।
প্রশ্ন : ওই মা বা অভিভাবক কী দেখলে বুঝবেন, তার বাচ্চার ক্যানসার হয়েছে। তাকে চিকিৎসকের কাছে নেওয়া দরকার? এই ক্যানসারগুলোতে কী লক্ষণ দেখা দেবে?
উত্তর : প্রথমত ক্যানসার মানেই আমরা সবাই বুঝি একটি টিউমার হয়েছে, এটি একটি। আরেকটি হলো কিছু লক্ষণ থাকে, যদি মস্তিষ্কে ক্যানসার হয়, তার বমি হবে, খিঁচুনি হবে। যদি এটি কিডনিতে হয়, দেখা যাবে প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। অথবা পেটের ভেতর যদি হয়, কিডনিটা পেটের ভেতর থাকে, নিউরোব্লাস্টোমায় সাধারণত এড্রেনাল গ্রন্থি পেটের ভেতর থাকে। গোসল করার সময় বা পেটে নিয়ে তেল মালিশ করার সময় হাতে একটি চাকা লাগল, অথবা দেখা যায় বাচ্চা ঠিকমতো খাচ্ছে না, ঠিকমতো বড় হচ্ছে না, মাঝে মাঝে খায়, আবার জ্বর থাকে, শরীরটা ঠিক ভালো যাচ্ছে না। এ রকম হলে আমরা কিছু প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য হয়তো গেলাম, তখন হয়তো কিছু পরীক্ষা- নিরীক্ষা দিল, তখন ধরা পড়ল যে ক্যানসার হয়েছে।
প্রশ্ন : শিশুদের এই ক্যানসারগুলো সার্জারি করে ভালো করা সম্ভব কি?
উত্তর : অবশ্যই ভালো করা সম্ভব। তবে ক্যানসারের চিকিৎসা কেবল সার্জারি নয়। সার্জারি একটি বিষয়। অর্থাৎ সার্জারি হলো ক্যানসার চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কখনো কখনো শুধু সার্জারি করলেও ক্যানসার চিকিৎসা ভালো হয়ে যায়, যদি তার ব্যাপ্তি ওই এলাকায় থাকে। কিছু কিছু ক্যানসারে আমাদের সার্জারি করতে হবে এবং ক্যামোথেরাপি দিতে হবে। আবার কখনো কখনো সার্জারি, ক্যামো, তিনটি দিতে হবে। এটি হলো এক এক ক্যানসারের এক এক বৈশিষ্ট্য।
বাংলাদেশে শিশুদের যেসব সার্জিক্যাল বিষয় রয়েছে, এটা এখন বিশ্বের যেকোনো দেশ এবং বাইরের ভালো ভালো দেশের যারা চিকিৎসা বিজ্ঞানে অনেক উন্নত, আমাদের দেশেও একই নিয়মে, একইভাবে আমরা সার্জারি সফলতার সঙ্গে করতে পারি। ক্যানসারের আমরা পরিপূর্ণ সার্জিক্যাল চিকিৎসা দেই। তবে এই ক্যানসার চিকিৎসার জন্য একটি ওয়ানস্টপ সার্ভিস, অর্থাৎ একই জায়গায় সার্ভিস দরকার। বাইরে বা অনেক উন্নত দেশে, যারা চিকিৎসা বিজ্ঞানে আধুনিক, তারা একই ছাদের নিচে সম্পূর্ণ যত্নটা দেয়। অর্থাৎ একটি দল, যারা নির্ধারণ করে ক্যামোথেরাপি লাগলে সেটি দেয়। একটি ক্যানসার বোর্ড হয়। বোর্ডে অনকোলজিস্ট থাকে, প্যাথোলজিস্ট থাকে, রেডিওলজিস্ট থাকে। এটা আমাদের দেশেও এখন অনেকটা উন্নত হয়েছে। তবে এটি একক ভাবে। তবে এটি আমরা সংগঠিত করে আরো ভালো সার্ভিস দিতে পারি। আমরা পেডিয়াট্রিক সার্জারিতে যেসব ক্যানসারের চিকিৎসা করছি, অন্যান্য দেশের সারভাইভাল রেটের তুলনায় এটি কোনো অংশে কম নয়। কিছু সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও মানসম্পন্ন চিকিৎসা পাচ্ছে। আমাদের ফলাফল ভালো।