ফিস্টুলা করতে সঠিক চিকিৎসক নির্বাচন জরুরি
কিডনি অকেজো হয়ে গেলে এক পর্যায়ে ডায়ালাইসিস করতে হয়। আর ডায়ালাইসিসের জন্য ফিস্টুলা করার প্রয়োজন পড়ে।
শরীরে একটি বিশেষ অস্ত্রোপচার করে দুটো রক্তনালিকে জোড়া লাগিয়ে দেওয়াকে বলা হয় ফিস্টুলা। তবে ফিস্টুলা করার জন্য সঠিক চিকিৎসক নির্বাচন করা জরুরি।
এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩০৭৬তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. সাকলায়েন রাসেল। বর্তমানে তিনি ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে ভাসকুলার সার্জারি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : এই যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সেটি আসলে কাদের মাধ্যমে সম্পাদিত হচ্ছে?
উত্তর : সত্যিকার অর্থে কিডনি রোগীরা কিডনি বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধায়নে থাকে। আমাদের দেশে এই মুহূর্তে দেখা গেছে প্রায় দুই কোটি লোক কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত। কিডনি রোগে আক্রান্ত বড় একটি অংশ এদের যখন কিডনিটা বিকল হওয়ার শেষ পর্যায়ে চলে যায়, তখন তাদের ডায়ালাইসিসের আশ্রয় নিতে হয়, তখনই তারা ভাবে, এর ফিস্টুলা করা দরকার। তবে দীর্ঘদিন ধরে জেনারেল সার্জন, ইউরোলজিস্ট থেকে শুরু করে, অনেক সার্জন এই ফিস্টুলা অস্ত্রোপচার করলেও যেহেতু এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিশেষজ্ঞ বলতে গেলে একজন ভাসকুলার সার্জনকে বলা উচিত, তাই আমরা সবসময় পরামর্শ দেই, আপনার রোগীর সুবিধার্থে একজন ভাসকুলার সার্জন যদি আশপাশে পাওয়া যায়, তাহলে ভালো। তবে ইউরোলজি, জেনারেল সার্জন থেকে শুরু করে অনেকেই সফলভাবে করছেন, তবে সময় এসে গেছে ভাসকুলার সার্জনদের কাছে যাওয়ার। যেহেতু ভাসকুলার সার্জনরা আস্তে আস্তে এ দেশে তৈরি হচ্ছেন। রোগী ও চিকিৎসকের ভাবা উচিত আমি আমার রোগীর ফিস্টুলাটি করার আগে একজন ভাসকুলার সার্জনের সাহায্য নেব কি না।
প্রশ্ন : এর মানে যেই চিকিৎসক ডায়ালাইসিসটি করবেন, তার ওপর দায়িত্ব অনেকটা বর্তায়। তাই কি?
উত্তর : অনেকটাই বর্তায়। সাধারণ মানুষ ভেইন বা শিরাগুলোকে রগ বলে। আমরা বলি যে অস্ত্রোপচার করব, সেটি তো আসলে করব, ভেইন বা শিরা বা রগের মধ্যেই।
যেসব দর্শক ও চিকিৎসক অনুষ্ঠানটি দেখছেন তাদের একটু বলতে চাই, আপনার কাছে যদি কোনো কিডনি রোগী থাকে, কিংবা আপনি যদি একজন কিডনি রোগীর চিকিৎসক হয়ে থাকেন, আপনার রোগীকে প্রথমেই বলে দেওয়া উচিত,‘আপনার হাতের যে শিরাগুলো দেখছেন বা রগগুলো দেখছেন, এটি আপনার জীবনের একদির রাস্তা হয়ে দাঁড়াবে, আপনাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। এই হাতের ভেইনগুলোকে কোনোভাবে নষ্ট করবেন না।’ দেখা যায় ভেইনগুলোতে রক্ত দিচ্ছে, দিতে দিতে আর ভেইন থাকে না। দেখা যায়, ভেইনের অভাবে ফিস্টুলা করা যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত তিনি ডায়ালাইসিস করতে না পেরে দ্রুত মৃত্যুর দিকে চলে যাচ্ছেন। হাতের আঙ্গুলের পাশের ভেইনগুলো আমরা সহজে ব্যবহার করতে পারি। তবে হাতের এই অংশগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে যারা কিডনি রোগে আক্রান্ত তাদের সতর্ক হওয়া উচিত। কারণ, ওই ভেইনগুলোই তার জন্য পরে জীবনপথ হয়ে যাবে।
আমার দিক থেকে, একজন ভাসকুলার সার্জন হিসেবে মনে হয় অস্ত্রোপচারটা খুবই সূক্ষ্ম, কিছুটা সময় কম লাগে। তবে অন্য যেকোনো অস্ত্রোপচারের তুলনায় জটিলতর অস্ত্রোপচার। বলা হয়, একজন রোগীকে সঠিকভাবে যদি একটি ফিস্টুলা করে দেওয়া যায়, এটি তার জীবনে অনেকটাই বেঁচে থাকার আশা তৈরি করে। যত্রতত্র যে কাউকে দিয়ে যদি এই অস্ত্রোপচারটি করানো হয়, এটি রোগীর আর্থিক, মানসিক সব দিক থেকে ক্ষতির কারণ হবে।