দূর ভ্রমণে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে কী করবেন
ভ্রমণে অসুস্থ হয়ে পড়া বিচিত্র নয়। আর তাই ভ্রমণের আগে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। সঙ্গে রাখা উচিত সামান্য কিছু ওষুধপত্র। আর তাই তেমন কিছু ওষুধপত্রের তালিকা ও তার ব্যবহার নির্দেশিকা তুলে ধরা হলো। বাসে চড়লে যাদের বমি হয়, তারা ভ্রমণের আধঘণ্টা আগে বমিরোধক ওষুধ যেমন এভোমিন/ নোভামিট/ স্টিমেলিটি ইত্যাদির যেকোনোটির একটি বড়ি খেয়ে নিতে পারেন। এ ওষুধ সেবনে তন্দ্রালু ভাব হতে পারে।
খাবার কিংবা অন্য কারণে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিস্টা, হিস্টাল, হিস্টাসিন, এক্সপিলিন ইত্যাদি ওষুধ একটি করে দিনে তিনবার খাওয়া যেতে পারে। এ ওষুধ ঘুমের উদ্রেক করে। তবে ঘুমের ভাবমুক্ত ওষুধও রয়েছে। ইনসিডাল, মেড্রোলিন, মেবোলিন—এগুলো হচ্ছে সেই ওষুধ, যা ঘুমের উদ্রেক না করে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা দূর করবে। উল্লেখ্য, এই ওষুধগুলো সর্দির জন্য বহুল ব্যবহৃত।
খুসখুসে কাশির জন্য রয়েছে ডাইড্রিল, অ্যানুটস, টুসকা ইত্যাদি। এগুলো দুই চামচ করে দিনে তিনবার খেতে পারেন।
মাথাব্যথা, গা ব্যথা, সামান্য জ্বর হলে প্রথমেই খাওয়া যেতে পারে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ। নাপা, এইস, টিমিডিল, অ্যাভলোপল ইত্যাদি ওষুধ হচ্ছে প্যারাসিটামল উপাদান সমৃদ্ধ ওষুধ। এগুলো একটা করে দিনে তিনবার ভরা পেটে খাওয়া যেতে পারে প্রয়োজনমতো।
পেটের অসুখের জন্যও ওষুধ সঙ্গে রাখা উচিত। সাধারণ পেটের পীড়ায় মেট্রোনিডাজল জাতীয় ওষুধ, যেমন—ফ্লাজিল, মেট্রিক, ফিলমেট, অ্যামোট্রাক্স ইত্যাদি ওষুধের যেকোনোটি ৪০০ মিলিগ্রাম করে (একটি বড়ি) দিনে তিনবার পাঁচ দিন খেতে হবে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে উক্ত ওষুধের সাসপেনশন এক চামচ করে দিনে তিনবার দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া প্রতিবার পায়খানা করার পরপরই খেতে হবে ওরালস্যালাইন। বাড়তি ভোজনে বদহজম ও পেটে গ্যাস হতে পারে। কাজেই এসব সমস্যায় সঙ্গে রাখা যেতে পারে অ্যান্টাসিড জাতীয় ওষুধ।
এ জাতীয় ওষুধ বাজারে ফ্ল্যাটামিল ডিএস, অ্যান্টাসিড প্লাস অ্যালুসিন, অ্যাভলোসিড ইত্যাদি নামে ট্যাবলেট ও সাসপেনশন আকারে পাওয়া যায়। কাজেই এই ওষুধ প্রয়োজনমতো দুটি বড়ি বা দুই চামচ করে দিনে তিন/ চারবার খাওয়া যায়। পেটের অসুখ খুব বেশি, অর্থাৎ ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হলে ওরালস্যালাইনের পাশাপাশি একটি ইমোটিল ক্যাপসুল (এটি কখনই দিনে তিনটার বেশি খাবেন না) ও ক্যাপসুল টেট্রাসাইক্লিন ২৫০ মিলিগ্রাম একটি খেতে হবে। আর পায়খানার সঙ্গ রক্ত গেলে তখন ট্যাবলেট কোট্রিম দুটি করে অথবা একটি করে দিনে চারবার মোট পাঁচ থেকে সাত দিন খেতে হবে। আর পায়খানার সঙ্গে রক্ত গেলে তখন ট্যাবলেট কোট্রিম দুটি করে অথবা মেগাট্রিম একটি করে দিনে দুইবার মোট পাঁচ দিন খেতে হবে।
তলপেটে ব্যথা কিংবা ঋতুস্রাবের ব্যথার জন্য খাওয়া যেতে পারে, স্প্যানিল, বুটাপেন, হাইসোমাইড ইত্যাদি ওষুধ। এগুলো একটা করে দিনে তিনবার খাওয়া যেতে পারে।
ভ্রমণে রোদে পোড়া থেকে ত্বককে রক্ষা করার জন্য মুখে ও শরীরের উন্মুক্ত স্থানে মাখা যেতে পারে নিউট্রেজেনা এসপিএফ ফিফটিন ক্রিম। রোদে তিন ঘণ্টা পর পর এটি লাগাতে হয়।
এ ছাড়া কাটাছেঁড়ার জন্য সঙ্গে রাখা উচিত স্যাভলন/ ডেটল, গজ, লিউকোপ্লাস্ট, ইলাস্টপ্লাস্ট, স্টেরাইন তুলা ইত্যাদি।
যাঁরা উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, পেপটিক আলসার, হাঁপানি ইত্যাদি রোগে ভুগছেন, তাঁরা নিয়মিত ও জরুরি মুহূর্তের ওষুধগুলো সঙ্গে রাখবেন।
ভ্রমণে কখন ফুটানো পানি/টিউবঅয়েলের পানি ছাড়া খাবেন না। উল্লেখিত ওষুধগুলো মাত্রাতিরিক্ত খেলে বিপদ হতে পারে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে নির্দেশ উল্লেখিত অনুযায়ী খাওয়াতে হবে।
ঈদ ভ্রমণে অন্য সবকিছুর মতো ওষুধকে সঙ্গী করে নিন। এই সতর্কতা ঈদ আনন্দ যাতে মাটি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবে।
তবে একটি কথা, এসব ওষুধের মধ্যে কোনোটিতে কারো অ্যালার্জি থাকলে অথবা ড্রাগ অ্যালার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে (যেমন : মুখ, ঠোঁট ও শরীরের ত্বক লাল চাকার মতো হয়ে ফুলে ওঠা) সেই ওষুধ খাওয়া যাবে না বা খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। সর্বপোরি কোনো ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেবেন।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ।