মাড়ির প্রদাহ থেকে যেসব রোগ হয়
মাড়ির প্রদাহ একটি প্রচলিত সমস্যা। এর কারণে বিভিন্ন সমস্যা হয়। মাড়ির প্রদাহ কেন হয়, এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩১৩৫তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. সৈয়দ তামিজুল আহসান রতন। বর্তমানে তিনি রতন’স ডেন্টালে প্রধান পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : মাড়ির প্রদাহজনিত সমস্যাগুলো আসলে কী?
উত্তর : দেখা যায়, মুখের মধ্যে ডেন্টাল প্লাকগুলো দাঁতের গোড়ায় গোড়ায় জমে। এটি থেকে প্রধানত মাড়ির প্রদাহ শুরু হয়। এই প্রদাহ থেকে সব রোগ শুরু হয়। মুখের মধ্যে নয়, সমস্ত শরীরের মধ্যে। কেবল সেখানে নয়, সমস্ত শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে গিয়ে আক্রান্ত করে। তাহলে এটি মারাত্মক। মুখ অন্যতম পথ শরীরের প্রবেশ করার। প্রথমে মুখে ডেন্টাল প্লাকগুলো যখন জমে, এতে মিলিয়ন মিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়। এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ শুরু হয়। ভালোমতো ব্রাশ না হলে যত বয়স বাড়তে থাকে, একটি দাঁত থেকে আরেকটি দাঁতের ফাঁক বাড়তে থাকে। তখন খাবারটা বেশি আটকে থাকে। আর যদি দাঁতের ক্ষয় হয়, তাহলে তো আরো বেশি হয়। এখন মাড়ির সমস্যা থেকে দাঁতের কী প্রভাব পড়ছে, সেটি আমি বলছি। যখন খাদ্যকণাগুলো লেগে থাকে, বিশেষ করে মিষ্টিজাতীয় খাবার, সেটা খাদ্য হতে পারে, টুথপেস্টও হতে পারে—মিষ্টিসমৃদ্ধ টুথপেস্ট যেগুলো রয়েছে, সেগুলো কিন্তু আঠালো, সেগুলো যদি লেগে থাকে এতে মাড়িতে প্রভাব পড়ে। ব্রাশ করে রাতের বেলা যদি আমরা ঘুমাই, তখন দেখা যায় যে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি বেড়ে যায়। কারণ, মুখ তো বন্ধ। তখন টক্সিন নিঃসরণ হচ্ছে। তখন প্রত্যেকটা দাঁতে প্রভাব পড়ছে। দাঁতকে প্রভাবিত করার কারণে ওপরের অ্যানামেলগুলো চলে যাচ্ছে। আরো ভেতরে যখন ক্ষয় পায়, তখন সম্পূর্ণ পরিষ্কার হয় না। যদি ক্ষয় একটি হয়ে যায় দুই দাঁতের ফাঁকে, সঠিকভাবে পরিষ্কার হয় না, যদি ক্ষয় হয়ে যায় দুই দাঁতের ফাঁকে, আমি যতই ফ্লস করি না কেন কিন্তু ওই ক্ষয়ের মধ্যে যদি খাদ্যকণা ঢুকে থাকে, সেটি বের করা সম্ভব নয়। তাহলে মাড়ির সমস্যা থেকে যেমন রক্তপাত হয়, দুর্গন্ধ হয়, এগুলো থেকে একজনের সঙ্গে আরেকজনের কথা বলা মুশকিল হয়ে যায়। দাম্পত্য জীবন অসুখী হয়ে যায়। বিভিন্ন ধরনের সমস্যা এই মাড়ি থেকে হয়। দাঁত মাজতে গেলে দেখা যায় তার মাড়ি থেকে রক্তপাত হচ্ছে। মুখে দুর্গন্ধ হচ্ছে। যখন দাঁতে ক্ষয় হয়, তখন তো সেটি আস্তে আস্তে গভীরে পৌঁছে যায়, তখন তার ব্যথা শুরু হয়ে গেল। যখন খাদ্যকণা দুই দাঁতের ফাঁকে ঢুকে থাকে, তখন সেই সকেট আস্তে আস্তে ইরোশন হতে থাকে, ক্ষয় হতে থাকে। দাঁতটা আস্তে আস্তে নড়ে যায়।
এখন পেছনের দাঁত যদি নড়ে যায়, তার ফাংশনাল সমস্যা হচ্ছে। আর সামনের দাঁত যদি নড়ে যায়, তার এসথেটিক সমস্যা হচ্ছে। তার কথা বলার সমস্যা, খাওয়ার সমস্যার পাশাপাশি তার সৌন্দর্যেরও হানি হচ্ছে। এই মিষ্টিসমৃদ্ধ টুথপেস্ট দিয়ে যদি কেউ রাতের বেলা ব্রাশ করে, আর রাতে মিষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খেয়ে থাকে, কার্যক্রম ও সৌন্দর্যের ব্যাঘাত ঘটে।
প্রশ্ন : তাহলে টুথপেস্ট বাছাই করার ক্ষেত্রে কী করতে হবে?
উত্তর : টুথপেস্ট ব্যবহার করতে মানা করা হচ্ছে না। আমরা তো এখন শিখে ফেলেছি যে মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে হয়। দুটোই ব্যবহার করুন। মাউথ ওয়াশটা দু-এক ফোঁটা ব্রাশে নাও, এটা দিয়ে ব্রাশ করো, এটা লিকুইড, এটি তিনটি কাজ করছে। আর কোনো কিছু লেগেও থাকছে না, সঠিকভাবে পরিষ্কার হচ্ছে। বিশেষ করে রাতের সময়টায় এটি ব্যবহার করতে হবে। সারা দিন আমরা কথা বলছি, সারা দিন কথা বলার কারণে লাল নিজে নিজেই পরিষ্কার করে ফেলছে। এতে লেগে থাকছে না। আর আমরা দুবার ব্রাশ করি। আমরা সারা দিন যারা কাজ করি, আমাদের মুখের মধ্যে সারা দিন প্রচুর ডেন্টাল প্লাক জমে। এখন আমরা বাসায় ফিরে যদি আগে ব্রাশ করি, তার পর রাতের খাবার খাই, তাহলে সবচেয়ে ভালো। এরপর খাওয়ার পর গাম ম্যাসাজ অথবা ফ্লস। আর ব্রাশ করার কোনো দরকার নেই। কারণ, যখন স্মুদ থাকে, তখন খাদ্যকণা জমে না।
প্রশ্ন : অনেকে চলে এসে বলেন, স্কেলিং করতে। আপনারা কি তখন স্কেলিং করেন, নাকি অন্য কিছুও দেখেন?
উত্তর : আগে মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়লে ভাবত ক্যানসার হয়ে গেছে। এখন আর অতটা সে ভয় পাচ্ছে না। মাড়ি দিয়ে রক্তপাত বিভিন্ন কারণে হতে পারে। অনেকে বলেন, আমি দুবার ব্রাশ করি, আমার মাড়ি ফুলবে কেন? সেটাও আমাদের দেখতে হবে। তার বয়স কত? সে কোনো ওষুধ খাচ্ছে কি না? রক্তচাপের ওষুধ খাচ্ছে কি না। মেয়েদের বয়স কত, ১৪-১৫ বছরে তার মাড়ি ফুলতে পারে, রক্তপাত হতে পারে। তখন হরমোনের একটা পরিবর্তন হয়। গর্ভাবস্থায় তার মাড়ি ফুলে যায়। দেখা যায়, টিউমারের মতো বৃদ্ধিও হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন কারণে এসব জিনিস হতে পারে। প্রধানত হলো খাদ্যকণা।