ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ
জনসাধারণকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত রাখতে বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন-২০১৮-এর চূড়ান্ত খসড়ায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের চরম অবমূল্যায়ন করে অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে বাংলাদেশ ফিজিক্যাল থেরাপি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) ফিজিওথেরাপি পেশাজীবী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে মানববন্ধন করেছে গতকাল শনিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ফিজিওথেরাপি আধুনিক, বিজ্ঞানসম্মত, নিরাপদ ও কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন কারণে অসুস্থতা থেকে সুস্থ ও কর্মক্ষম হওয়ার জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার কার্যকারিতায় প্রতিনিয়ত সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন। কিন্তু বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন-২০১৮-এর চূড়ান্ত খসড়ায় ফিজিওথেরাপি পেশাজীবীদের অবমূল্যায়ন ও দমন করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন রকমের অনেক অসংগতি বিদ্যমান রাখা হয়েছে। এই অসংগতিগুলো রেখে আইন করা হলে একদিকে দেশের জনগণ মানসম্মত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবে, অন্যদিকে ফিজিওথেরাপি পেশাজীবীরা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বেন। ফিজিওথেরাপি পেশাজীবীর পরিবর্তে তাঁরা হবেন শুধু প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন পেশাজীবী, অর্থাৎ প্রতিবন্ধিতা ছাড়া ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকরা অন্য কোনো ধরনের রোগী দেখতে পারবেন না। এতে বাত, ব্যথা, স্পোর্টস ইনজুরিসহ শরীরের অন্য সমস্যায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা থাকলেও শুধু এ আইনের কারণে ফিজিওথেরাপির চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিতে পারবেন না। এতে রোগীরা বড় ধরনের সমস্যার ভেতর পড়বে বলে মন্তব্য করেন বক্তারা।
বর্তমান প্রস্তাবিত খসড়া প্রণয়ন কমিটিতে পেশাজীবীদের কোনোভাবেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এবং পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে এর ওপর মতামত প্রদানের কোনো সুযোগও দেওয়া হয়নি বলে কঠোর সমালোচনা করা হয় মানববন্ধন থেকে। এ ছাড়া গোপনীয়তার সঙ্গে চূড়ান্ত খসড়ায় ফিজিওথেরাপি পেশা ও পেশাজীবীদের অবমূল্যায়ন ও দমন করার সব ধরনের অসংগতিপূর্ণ ধারা রাখারও তীব্র নিন্দা জানানো হয় এ সময়।
বক্তারা আরো বলেন, প্রস্তাবিত রিহ্যাবিলিটেশন আইন দ্বারা ফিজিওথেরাপি পেশাকে শুধু রিহ্যাবিলিটেশনের মধ্যে সংকীর্ণ করা হয়েছে, যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল, এমনকি পৃথিবীর কোনো দেশেই রিহ্যাবিলিটেশন আইনে ফিজিওথেরাপি পেশা অন্তর্ভুক্তি নেই। ১৯৯২ সালে ভারতে প্রণীত রিহ্যাবিলিটেশন আইনেও ফিজিওথেরাপি অন্তর্ভুক্ত নেই। প্রস্তাবিত এই আইনের কারণে দেশের জনসাধারণ মানসম্মত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবে এবং ফিজিওথেরাপি পেশাজীবীরা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বেন।
ফিজিওথেরাপি সংযুক্ত করে এই রিহ্যাবিলিটেশন আইন করা হলে বাংলাদেশে ১৯৬০ সাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফিজিওথেরাপি বিভাগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শুরু হওয়া ৫৮ বছরের ফিজিওথেরাপি পেশা ও পেশাজীবীদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন বক্তারা। এতে একদিকে যেমন ফিজিওথেরাপি পেশাজীবী তৈরির পথ বন্ধ হবে, অন্যদিকে জনসাধারণ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবে।
বিপিএর দাবি ও আন্দোলনের জন্য সরকার ২০১৪ সালে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের জন্য স্বতন্ত্র কাউন্সিল প্রণয়নকল্পে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল। ফিজিওথেরাপির জন্য স্বতন্ত্র কাউন্সিল তৈরির বিষয়ে হাইকোর্ট ও রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও ফিজিওথেরাপি পেশাকে বিলুপ্ত করার জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিলে ফিজিওথেরাপি পেশাকে তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয় মানববন্ধন থেকে।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিপিএর সভাপতি ডা. দলিলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ডা. ফরিদ উদ্দিন, সহসভাপতি ডা. আরিফ জুবায়ের, যুগ্ম সম্পাদক ডা. মাসুক রায়হান উপল, ডা. মহসিন কবির লিমন, ডা. আকশাফুল ইমাম, পেশাজীবী ও শিক্ষকদের পক্ষে ডা. মোহাম্মদ আলী, ডা. শান্তনু মল্লিক, ডা. মো. শাহরুম, ডা. সাইফুল ইসলাম, ডা. নাহিদ, শিক্ষার্থীদের পক্ষে জাকারিয়া তমাল, মারুফা তান্নি প্রমুখ।