শিশুর অতিরিক্ত অস্থিরতায় কী করবেন
শিশুর অতিরিক্ত চঞ্চলতা ও অমনোযোগিতাকে বলা হয় অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (এডিএইচডি )। সাধারণত এক থেকে পাঁচ শতাংশ শিশুর মধ্যে এই সমস্যা দেখা যায়। শিশু অতিরিক্ত চঞ্চল ও অস্থির হলে সেটি পরিবারের সদস্যদের জন্য বেশ সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে শিশুটির তার পরবর্তী জীবনে আচরণগত সমস্যা হয় এবং লেখাপড়ায় ক্ষতি হয়। যা তাকে হতাশ করে তুলতে পারে।
লক্ষণ
অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডারের (এডিএইচডি) লক্ষণ কী এই বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানজির আহম্মদ তুষার বলেন, সাধারণত তিনটি প্রধান লক্ষণ রয়েছে। প্রথমত : মনোযোগের অভাব, দ্বিতীয়ত : মাত্রাতিরিক্ত অস্থিরতা, তৃতীয়ত : হঠাৎ কিছু করে ফেলার ইচ্ছা বা ইমপালসিভিটি । এসব সমস্যার কারণে শিশুটি কোনো কাজ গুছিয়ে করতে পারে না, বেশির ভাগ সময় হাত-পা নাড়তে থাকে, হয়তো অন্য শিশুর সঙ্গে খেলতে দিলে ঝগড়া করে, অপর শিশুটিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়, দীর্ঘসময় কোনো কিছুর জন্য অপেক্ষা করতে পারে না বা কোনো কাজের জন্য লাইনে দাঁড়াতে দিলে অপেক্ষা করতে পারে না, হয়তো ক্লাসে এক জায়গায় বসে থাকতে পারে না, পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে না ইত্যাদি।
করণীয়
কীভাবে শিশুটির এই আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়- এ বিষয়ে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট তুষার বলেন, শিশুটির মধ্যে এই ধরনের আচরণ দেখা দিলে তাকে শারীরিক পরিশ্রম হবে এমন কাজ করানো যেতে পারে। যেমন : সাঁতার কাটা বা দৌঁড়ানো ইত্যাদি। বাসায় নিয়ম মানার অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। বল দেওয়া-নেওয়ার মতো খেলা করুন, যাতে সে পালাবদলের বিষয়টি বুঝতে পারে। এসব শিশুর মনোযোগ বারে বারে অন্যদিকে চলে যায়, তাই নিরিবিলি পরিবেশে শিশুটির পড়ার স্থান নির্বাচন করতে হবে।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট তুষার আরো বলেন, লেখাপড়ায় বেশি সমস্যা হলে শিশুটির স্কুলের শিক্ষককে সমস্যার কথা জানান। শিশুর সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করতে অনুরোধ করুন। যদি লেখাপড়ায় অগ্রগতি না হয় শারীরিক দক্ষতা প্রয়োজন এমন ধরনের পেশা গ্রহণ করার কথা ভাবা যেতে পারে। যেমন : দৌঁড়, সাঁতার ইত্যাদি।
শিশুর এই অস্থিরতার জন্য অনেক সময় কিন্তু খাবার দায়ী থাকে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খাবারের অ্যালার্জির কারণে অস্থিরতা বাড়ছে কি না খেয়াল করুন। এ জন্য শিশুর অস্থিরতার পরিমাপ এবং কী খাবার সে খাচ্ছে তার একটি তালিকা তৈরি করতে পারেন। যে দিনগুলোতে অস্থিরতার মাত্রা বেশি ছিল, সেসব দিনে শিশুটি কী খাবার খেয়েছিল খেয়াল করুন। এবার চিহ্নিত খাবারটি দিয়ে আবার পরীক্ষা করুন। যদি প্রকৃত অর্থেই খাবারটিতে সমস্যা পাওয়া যায়, তবে সেই খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো।
শিশুটির জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের সমস্যায় শিশুকে আত্মসচেতন করে তোলা, মনোযোগ দিয়ে শোনা, পালাবদল করে কাজ করা, সামাজিক দক্ষতা বাড়ানো ইত্যাদি প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক অভ্র দাশ ভৌমিক জানান, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুর এই সমস্যাগুলো ভালো হয়ে যায়। তবে অল্প বয়সে চিকিৎসা করতে হয়। না হলে পরবর্তী সময়ে লেখাপড়ার ক্ষতি হয়ে যায়। ছোটবেলা থেকে সঠিক সামাজিক আচরণ না শিখলে এবং লেখাপড়ায় না ভালো করলে এর জন্য পরবর্তী জীবনে ভুগতে হয়। শিশুটি বড় হওয়ার পর হতাশায় ভুগতে পারে। সামাজিকভাবে অবস্থা খারাপ হয়ে যেতে পারে। এ সমস্যায় অটোমক্সিডিন জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়। লো ডোজে এন্টি মাইকোটি জাতীয় ওষুধ খাওয়ানোরও পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট তুষার বলেন, অনেক সময় শিশুটি বড় হলেও সমস্যাটি থেকে যেতে পারে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু না করলে শিশুর লেখাপড়ার ক্ষতির পাশাপাশি আচরণগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তখন চিকিৎসা বেশ জটিল হয়ে যায়। তাই শিশুকে প্রাথমিক অবস্থাতেই চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। এই সমস্যা আস্তে আস্তে ভালো হয়। তাই পরিবারের সদস্যদের এ বিষয়ে ধৈর্য ধরে শিশুটিকে সাহায্য করতে হবে।