হাঁটু ব্যথার কারণ কী
হাঁটু ব্যথা প্রচলিত সমস্যা। বিভিন্ন কারণে হাঁটুর ব্যথা হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিনের ২৩৮২তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. এ এইচ এম রেজাউল হক। বর্তমানে তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
urgentPhoto
প্রশ্ন : হাঁটু ব্যথা খুব প্রচলিত সমস্যা আমাদের দেশে। একটি বিশেষ বয়সে এই সমস্যাটা অনেক বেড়ে যায়। তবে যেকোনো বয়সেই এটি হতে পারে। হাঁটুর ব্যথার সমস্যার পেছনের কারণগুলো কী?
উত্তর : যদি বয়স ভেদে আমরা বলি, ছোটদের সাধারণত রিকেটসের জন্য হয়। এতে হাঁটু ব্যথা হয় এবং হাঁটু বেঁকে যায়।
মধ্যবর্তী বয়সে যদি আমরা বলি, তাহলে হাঁটুর ব্যথা কোনো আঘাতের জন্য হয়। সেটা মেনিস্কাস ইনজুরি, লিগামেন্ট ইনজুরি বা কোনো ফ্রাকচার-এসব কারণে মধ্যবর্তী বয়সের লোকদের সমস্যা হয়। আর বৃদ্ধ বয়সে প্রধানত অস্টিওআরথ্রাইটিস, অস্টিওপরোসিস-এসব কারণে হাঁটুর ব্যথা হয়।
প্রশ্ন : কী কারণে হাঁটুর ব্যথা হচ্ছে সেটি বোঝার কি কোনো উপায় আছে?
উত্তর : হাঁটুর ব্যথা কী কারণে হচ্ছে সেটি বোঝার জন্য আমরা প্রধানত একটি এক্সরে করার পরামর্শ দিই। বাচ্চাদের যদি হয়, এক্সরে করে দেখি তাদের বৃদ্ধির কোনো সমস্যা আছে কি না। বৃদ্ধ বয়সে যদি এটা হয় দেখি কার্টিলেজ ক্ষয় হয়েছে কি না অথবা হাড় ক্ষয় হয়েছে কি না দেখি। আর মধ্য বয়সে যদি হয়, কোনো আঘাতের কারণে হয়েছে কি না দেখি। এরপর আমরা কিছু রক্তের পরীক্ষা করি। ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, অ্যালকেলাইন, ফসফটেস, সিরাম ইউরিক এসিড, রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস এগুলো দেখি।
আর যদি নরম টিস্যুর আহত হওয়ার কথা চিন্তা করি, তাহলে এমআরআই পরীক্ষা করি।
প্রশ্ন : প্রবীণদের অস্টিওপরোসিস, অস্টিওআরথ্রাইটিস কেন হয়? সেটি সমাধানের উপায় কী?
উত্তর : অস্টিওপরোসিস একটি ভিন্ন জিনিস। আমাদের হাড় একটি জীবন্ত জিনিস। সেটি প্রতিদিনই ক্ষয় হচ্ছে এবং এর গড়ন হচ্ছে। এখন ক্ষয় আর গড়নের মধ্যে যদি ভারসাম্য ঠিকমতো না হয়, তখন ক্ষয় বেশি হয়ে যাবে। এটা সাধারণত বয়স্কদের হয়। সাধারণত বয়স্ক মহিলাদের বেশি হয়। এই জন্য আমরা প্রতিকার হিসেবে জীবনের প্রথমার্ধে আমরা যদি হাড়ের গড়নটা ভালোভাবে বৃদ্ধি করি, তাহলে আমাদের ক্ষয় পরে কম হবে। শিশুকাল থেকে সচেতন থাকতে হবে, যেন হাড়ের গঠন ভালো হয়।
প্রশ্ন : সে ক্ষেত্রে কী করণীয়?
উত্তর : ৩০ বছর পর্যন্ত হাড়ের গড়ন হয়। সে জন্য আমাদের হাড়ের গড়নের জন্য নিয়মিত ব্যায়াম, পরিমিত আহার এবং ওজনের দিকে নজর দিতে হবে।
প্রশ্ন : অস্টিওপরোসিস ও অস্টিওআরথ্রাইটিস দুটোর ক্ষেত্রেই কি একই রকম পরামর্শ থাকবে?
উত্তর : অস্টিওআরথ্রাইটিস অন্য আরেকটি রোগ। হাঁটুর ভেতরে হাড়ের বাইরে যে সাদা অংশ থাকে, একে আমরা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় কার্টিলেজ বলি। সেই কার্টিলেজ যখন ক্ষয় হয়ে যায়, সেখানে বাড়তি কিছু হাড় তৈরি হয়। তখন আমরা একে বলি অস্টিওআরথ্রাইটিস। হাঁটুর কার্টিলেজ ক্ষয় হয়ে যায়। এটা বয়স বাড়লে হয়। কার্টিলেজ যাতে ক্ষয় না হয় সেদিকে আমরা নজর দিই।
প্রশ্ন : এই সময়ে আপনারা চিকিৎসার জন্য কোন বিষয়গুলোকে নির্ধারণ করে থাকেন?
উত্তর : একজন রোগী আমাদের কাছে অস্টিওআরথ্রাইটিস নিয়ে কোন পর্যায়ে এসেছে এর ওপর নির্ভর করে। যদি সে প্রথম পর্যায়ে থাকে, যেসব কারণে তার হাঁটুর ক্ষয় হচ্ছে, সেগুলো নিবারণ করার চেষ্টা করি। যেমন : ওজন একটি কারণ, পেশা একটি কারণ। অনেক সময় যারা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে বা অনেক ভার বহন করে, অথবা হাঁটুর ওপর অতিরিক্ত চাপ দেয়, সেগুলোর দিকে নজর দিই। ব্যথা রোধের জন্য সাময়িক কিছু ওষুধ দিই এবং ব্যায়াম করতে বলি। যেন হাঁটুর লিগামেন্ট ও পেশিগুলো শক্তিশালী হয়। এভাবে আমরা প্রথম পর্যায়ে রোগ নিরাময়ে চেষ্টা করি।
দ্বিতীয় পর্যায়ে এলে হয়তো ব্যথা বেশি হয়, তখন আমরা ইনজেকশন দিই। অথবা জীবনযাপনের কিছু পরিবর্তন করি। খুব বয়স্ক হলে আমরা পরামর্শ দিই লাঠিতে ভর করে হাঁটেন বা কিছুর সাহায্য নেন। ওজন কমান অথবা হাড়ের অ্যালাইনমেন্টে যদি সমস্যা থাকে, সেটা ঠিক করার পরামর্শ দিই।