শিশুর পুষ্টিহীনতা প্রতিরোধে যা করবেন

শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি, বুদ্ধির বিকাশ ও সুস্থতার জন্য পুষ্টি প্রয়োজন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশের ৪৮ ভাগ শিশু অপুষ্টিতে আক্রান্ত। শিশু মৃত্যুর প্রায় এক তৃতীয়াংশের কারণ মারাত্মক পুষ্টিহীনতা। চলুন জেনে নেই পুষ্টিহীন শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে।
তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি
১) শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ঘন ঘন রোগে আক্রান্ত হওয়া।
২) খাবারে অরুচি।
৩) শিশুর অস্বাভাবিক আচরণ।
৪) শিশুর ত্বক ও চুলের স্বাভাবিক রং পরিবর্তন।
৫) অমনোযোগ।
৬) সব সময় শিশুর মধ্যে ক্লান্ত ভাব লক্ষ করা।
৭) রোগ থেকে সুস্থ হতে বেশি সময় লাগে।
দীর্ঘ মেয়াদি স্বাস্থ্য ঝুঁকি
১) শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া।
২) বয়স ও উচ্চতা অনুসারে ওজন ও উচ্চতা না বাড়া।
৪) শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ না হওয়া।
৫) মুখ,পেট ও পায়ে পানি আসা।
৬) রক্ত শূন্যতা।
৭) পড়াশোনায় অমনযোগী ও পরীক্ষায় ফলাফল অসন্তোষজনক হওয়া।
৮) স্বাস্থ্য ভালো না থাকা।
৯) শিশুর কর্ম দক্ষতা কমে যাওয়া।
১০) চোখে কম দেখা এবং ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে পড়া।
১১) মৃত্যু ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়া।
পুষ্টি হীনতার কারণ
১) শিশুর দীর্ঘ দিন সুষম খাদ্যের অভাব।
২) মা-বাবার পুষ্টি বিষয়ক জ্ঞানের অভাব।
৩) পারিবারের অশিক্ষা ও দারিদ্র্য।
৪) শিশুদের ক্রনিক রোগের কারণে খাবারে অরুচি।
৫) শিশুর দীর্ঘদিন ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হওয়া।
৬) শিশুর লিভারসহ পরিপাকতন্ত্রের রোগ।
৭) অস্বাস্থ্যকরভাবে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও রান্না করা।
৮ ) খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণ।
৯) শিশুর কৃমি রোগ।
১০) খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেলের অভাব, শিশু পুষ্টিহীনতার অন্যতম কারণ।
পুষ্টিহীনতা প্রতিরোধে যা করবেন
১) পরিবারের সবাইকে স্বাস্থ্যগত ও পুষ্টিগত জ্ঞান বাড়াতে হবে।
২) শিশুর পুষ্টিহীনতার সঠিক কারণ বের করে তার চিকিৎসা করতে হবে।
৩) শিশুর জন্মের পর থেকে ৫ মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
৪) শিশুকে সময় মতো সব টিকা দিলে স্বাস্থ্যের সুরক্ষা বৃদ্ধি পাবে।
৬) শিশুর ছয় মাস বয়স থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি পাতলা সবজি খিচুড়ি, ডিমের কুসুম ও সেমি সলিড খাবার শুরু করতে হবে।
৭) শিশুকে খাওয়ানোর সময় ভালোবাসা ও যত্ন নিয়ে খাওয়াতে হবে।
৮) যেহেতু বাংলাদেশে প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলের অভাবে শিশুরা পুষ্টিহীনতায় ভোগে- তাই এসব খাবার বেশি করে খেতে দিতে হবে।
৯) পুষ্টিহীন শিশুদের বিশেষ যত্ন নিতে হবে এবং নিয়মিত ডাক্তারের সেবা ও পুষ্টিকর খাবার খেতে দিতে হবে।
১০) পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করুন এবং দুটি সন্তানের মধ্যে বয়সের আদর্শ দূরত্ব বজায় রেখে সন্তান নিন। নতুন সন্তান এলে আগের সন্তানের খাবার ও সার্বিক যত্নে অবহেলা করবেন না।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক,গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ, সাভার, ঢাকা।