গরমে সুস্থভাবে রোজা পালনের উপায়
গরমে এ বছরের রোজায় আমাদের প্রায় ১৩-১৪ ঘণ্টা রোজা রাখতে হয়। গরমে এই সময়ে রোজায় আমাদের শরীরে বিভিন্ন সমস্যা ও জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই সুস্থভাবে রোজা রাখতে কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে।
গরমে রোজাদারদের শারীরিক যেসব পরিবর্তন হতে পারে
– আমাদের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৬.৫-৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যদি পরিবেশের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়, তবে শরীরের পিএইচ (pH )-এর পরিবর্তন ঘটে। এতে সব স্বাভাবিক বিপাক ক্রিয়া ও বায়োকেমিক্যাল কার্যক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
– অতিরিক্ত গরমে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পানি ও ইলেকট্রলাইট (লবণ ও মিনারেল) বের হয়ে মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, চোখে ঝাপসা দেখা, কর্মক্ষেত্রে মনোযোগ নষ্ট হওয়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। এমনকি সচেতন না হলে মৃত্যুঝুঁকিও হতে পারে।
– প্রচণ্ড গরমে দীর্ঘ সময় রোজা রাখলে পানিশূন্যতা, বুক জ্বালা/ এসিডিটিসহ নানা সমস্যা হতে পারে।
– গরমে ইফতার ও সাহ্রীর খাবারে ব্যাকটেরিয়াসহ নানা জীবাণু জন্মাতে পারে। এতে খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়ে অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন।
– দীর্ঘ সময় রোজাতে শরীরে জমানো গ্লাইকোজেন শক্তির উৎস আট ঘণ্টা পর শেষ হয়ে চর্বি থেকে শক্তি আসতে গিয়ে বিভিন্ন মেটাবলিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গরমে সুস্থভাবে রোজা রাখার জন্য করণীয়
– ইফতার ও সাহ্রীতে বেশি করে তরল খাবার খেতে হবে। পাশাপাশি শরীরে বেশি পানি ধরে রাখে এমন খাবার, যেমন—লেবু, কমলা, শসা, তরমুজ ও ডাবের পানি খেতে হবে।
– ইফতার ও সাহ্রীর মাঝখানে প্রচুর পানি ও পানিজাতীয় খাবার খেতে হবে। সাহ্রীতে কমপক্ষে এক লিটার পানি পান করতে হবে। এই পানি শারীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান দূর করে ক্ষুধার চাহিদা কিছুটা কমাবে।
– চর্বিজাতীয় খাবার সাহ্রীতে বাদ দিতে হবে। কারণ, চর্বিজাতীয় খাবার শরীরে বেশি গরম তৈরি করে। এতে শরীর থেকে পানি বের হয়ে গিয়ে পানিশূন্যতা তৈরি হয়।
– সাহ্রীতে বেশি করে আমিষ/ প্রোটিন খাবার খেলে শরীর থেকে পানি কম বের হবে। এতে ক্ষুধা কম লাগবে এবং শক্তি থাকবে অনেকক্ষণ।
– চা ও কফি খাওয়া যাবে না। কারণ, এগুলোর মূত্রবর্ধক উপাদান প্রস্রাব বেশি তৈরি করে পানিশূন্যতা ঘটায়।
– শুকনো ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে যেতে হবে। কারণ, এগুলো তাড়াতাড়ি শক্তি দিলেও শরীরকে পানিশূন্য করে, ক্লান্ত অনুভূতি তৈরি করতে পারে।
– কোনো সাহ্রী বাদ দেওয়া যাবে না। শেষ মুহূর্তে সাহ্রী খেতে হবে, যাতে সারা দিন শরীরে শক্তি থাকে।
– গরমে আরামের জন্য রোজাদারকে সুতির সাদা বা হালকা রঙের কাপড় পরতে হবে। এতে শরীর ঠান্ডা থাকবে।
– রোজাদাররা দরকার ছাড়া বাইরে না বেরোলেই ভালো। বাইরে বের হলে প্রয়োজনে ছাতা ব্যবহার করবেন।
– বেশি পরিশ্রমের কাজ একসঙ্গে না করে প্রতিদিনের কাজগুলো অল্প বিরতি দিয়ে করলে ক্লান্তি ভাব কম লাগবে।
– খাদ্যের বিষক্রিয়া থেকে বাঁচার জন্য, অতিরিক্ত গরমে বাসায় বানানো গরম গরম সাহ্রী ও ইফতার খেতে হবে।