পেটে ছত্রাকের গুরুত্ব জানতে গবেষণা
পেট ঠিক না থাকলে শরীর-মনও চাঙ্গা থাকে না। মানুষের অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা থাকলেও ছত্রাকের বিষয়ে এখনো অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা এবার সেই রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করছেন। ফুংগি জিমো-সেপটোরিয়া ট্রি-টিচি বেশ খটোমটো নাম বটে, তবে অবশেষে অন্ত্রের এমন ছত্রাক নিয়ে গবেষণার উদ্যোগ চলছে। কিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর টোমাস বশ ও তাঁর টিম অন্ত্রে ছত্রাকের গুরুত্ব জানতে চায়। আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও ছত্রাক কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সে বিষয়েও তাঁরা গবেষণা করছেন।
টোমাস বলেন, ‘অনেক প্রশ্নের এখনো কোনো সদুত্তর নেই৷ ছত্রাকের সঙ্গে ব্যাকটিরিয়ার কীভাবে কথোপকথন চলে? সেগুলো আমাদের ‘‘হোস্ট সেল’-এর সঙ্গেই বা কীভাবে আদানপ্রদান করে? ফাংগাস কীভাবে আচমকা রোগের প্যাথোজেন হয়ে ওঠে? অন্ত্রের অন্যান্য বাসিন্দারা অন্য কোনো বিন্যাসে থাকলে বা ব্যাঘাতের মুখে পড়লেই কি এমনটা ঘটে? বর্তমানে আমরা সে সব জানি না।’’
গবেষণার মাধ্যমে সেই জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা চলছে৷ বিজ্ঞানীরা ডায়াবেটিস, স্থূলতা বা প্রদাহের কারণে দীর্ঘস্থায়ী অন্ত্রের রোগ সম্পর্কে জানতে চান, যেগুলোকে ‘লাইফস্টাইল ডিজিজ’ বলা হয়।
প্রশ্ন হলো, অন্ত্রের ছত্রাক সে ক্ষেত্রে কোন ভূমিকা পালন করে? ছত্রাকের এক অথবা একাধিক কোষ থাকতে পারে। যে কোনো মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশে ছত্রাক বাসা বাঁধতে পারে। যেমন মুখ, যৌনাঙ্গ বা অন্ত্র। ক্যান্ডিডা অ্যালবিক্যান্স নামের ইস্ট ফাংগাস সবচেয়ে ঘনঘন দেখা যায়।
ডাক্তার হিসেবে আন্দ্রেয়াস মিশালসেন অবশ্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ দেখেন না। তাঁর মতে, ‘আমাদের প্রত্যেকের অন্ত্রেই নির্দিষ্ট মাত্রায় ছত্রাক রয়েছে৷ তাতে সাধারণত কোনো ক্ষতি হয়না৷ কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া সেটা কোনো প্যাথোলজিকাল ফল হিসেবে বিবেচনা করা হয়না৷ কম পরিমাণে থাকলে কোনো সমস্যা নেই। তবে মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি হলে সামগ্রিক মাইক্রোবায়োম পরীক্ষা করতে হবে।’
মাইক্রোবায়োম – অর্থাৎ, গোটা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট, ত্বক ও মিউকাস ঝিল্লির ১০০ ট্রিলিয়ান অণুজীব। সব বাসিন্দাদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর ভারসাম্য বজায় রাখা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ৷ কয়েক বছর ধরে বিষয়টি গবেষণার মূল লক্ষ্য হয়ে উঠছে ৷ সেইসঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক শনাক্ত করা ও রোগ নির্ণয় করার ক্ষেত্রে আরো ঘনঘন সাফল্যও দেখা যাচ্ছে।
আন্দ্রেয়াস মিশালসেন বলেন, ‘এই সব ছত্রাক মেটাবলিক উপাদান সৃষ্টি করে, যা শরীরের ক্ষতি করতে পারে এমনকি মেটাবলিজমে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। শেষে শরীরে সমস্যা দেখা দেয়।’
ছত্রাকের কারণে পেট্রা ব্যোডেফেল্ডের অন্ত্রের ভারসাম্যে এমন বিঘ্নের অভিজ্ঞতা হয়েছে। প্রায় দুই বছর ধরে তিনি পেটের ব্যথা ও চাপের কারণে একটানা কষ্ট পেয়েছেন। বিশেষ করে খাদ্যগ্রহণের মাঝের সময়ে কষ্ট বেড়ে যেতো।
অন্ত্রের রোগী হিসেবে পেট্রা ব্যোডেফেল্ড বলেন, ‘আমি জ্বলন অনুভব করতাম। সেইসঙ্গে মুখ, মুখের কোণ ও জিবও জ্বালা করতো। খাওয়ার পর পেট প্রথমে শান্ত থাকতো। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর আবার জ্বলন শুরু হতো। বিশেষ করে একটু মসলাদার বা টক খেলেই সঙ্গে সঙ্গে অন্ত্রে কষ্ট হতো।’
পেট্রা সিলিয়া শেফার নামের এক পুষ্টিবিদের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। তিনি সবার আগে বিস্তারিত সমস্যার কথা শোনেন। পেট্রাকে কিছু অ্যান্টি ফাংগাল ওষুধ দেওয়া হয়৷ তার মধ্যে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টের জন্য ট্যাবলেট এবং উপরের ট্র্যাক্ট হিসেবে পরিচিত মুখ ও গলার অংশের জন্য এক তরল ওষুধও ছিল৷ সিলিয়া বলেন, ‘সবাইকে আমরা অ্যান্টি ফাংগাল ওষুধ দেই না। যারা অনেক বছর ধরে ভুগছেন, যাদের জীবনযাত্রার উপর কুপ্রভাব পড়ছে, শুধু এমন বিরল ক্ষেত্রেই সেটা প্রয়োগ করা হয়৷ তবে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনই আমাদের মূল লক্ষ্য।
তার জন্য তিনটি পরিবর্তন আনা জরুরি। প্রথমত চিনি এড়িয়ে চলতে হবে। দ্বিতীয়ত পাউরুটি, নুডেলস, ভাত ও আলুর মতো কার্বোহাইড্রেট বা শর্করাযুক্ত খাবারও কম খেতে হবে এবং তৃতীয়ত, প্রতিদিন দই, বাটার মিল্ক বা কেফিরের মতো প্রিবায়োটিক খাবার খেতে হবে।
পেট্রা ব্যোডেফেল্ড জানান, ‘জ্বলন চলে গেছে৷ ব্যথাও আর নেই। অন্ত্রের অবস্থা ভালো। সুস্থ বোধ করছি। নতুন সূচনা হচ্ছে।’
অন্ত্রের ছত্রাক যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, গবেষকরা সে বিষয়ে নিশ্চিত। এ ক্ষেত্রে ভারসাম্য অত্যন্ত জরুরি। তবে আদর্শ অবস্থা সম্পর্কে এখনো অস্পষ্টতা রয়েছে। গবেষকরা দ্রুত সে বিষয়ে আরো জ্ঞান অর্জনের আশা করছেন।