নিয়ন্ত্রণ করুন অম্ল-ক্ষার সাম্যাবস্থা
আমাদের দেহ নিরপেক্ষ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এটির মান ৭ দশমিক ৪। এর মানে হলো দেহে অম্ল ও ক্ষার সবর্দা সমপরিমাণে থাকে। কোনো কারণে অম্ল-ক্ষার সাম্যাবস্থা একটু এদিক-ওদিক হলে জীবন ধারণ হয়ে যায় কষ্টকর। অনেক সময় মৃত্যুও ঘটতে পারে। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, দেহ অম্লীয় হয়ে গেলে দেখা দেয় যত বিপত্তি।
গবেষণায় দেখা গেছে, দেহে অম্ল-ক্ষার সাম্যাবস্থা ঠিক থাকলে হৃদরোগ শতকরা ২২ ভাগ, টাইপ-১ ডায়াবেটিস ৮৩ ভাগ, আথ্রাইটিসের ব্যথা, ক্যানসার ও বুড়িয়ে যাওয়া বাধাগ্রস্ত হয়। গবেষণায় আরো দেখা গেছে দেহে অম্ল বা এসিড সামান্য পরিমাণে বেড়ে গেলে হৃদরোগ, অতিরিক্ত মুটিয়ে যাওয়া, ডায়াবেটিস, কিডনিতে পাথর, রোগ-প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়া, অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ক্ষয়, অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশিতে ব্যথা, দ্রুত ক্লান্তিবোধ করা ইত্যাদি সমস্যা হয়।
এর কারণ হিসেবে গবেষকরা বলেছেন, দেহে অম্লীয় বা এসিডিটি হলে দেহের ক্ষতিকর পদার্থগুলোকে কিডনি শরীর থেকে বের করে দিতে পারে না। এতে এগুলো শরীরে জমে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করে। এ থেকে মুক্তির পথও বলে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা ছয়টি নিয়ম মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
পানি পান করুন
পানি শরীরের বিষাক্ত ও ক্ষতিকর পদার্থগুলো মূত্র, শ্বাস-প্রশ্বাস, পায়খানা ও ঘামের আকারে ত্বকের মাধ্যমে দেহ থেকে বের করে দেয়। এ জন্য প্রতিদিন দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করুন। বয়স বেড়ে গেলে শরীরে পানির পরিমাণ কমে যায়। এতে দেহ এসব ক্ষতিকর পদার্থগুলো বের করে দিতে পারে না। এ জন্য শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। তাই প্রচুর পানি পান করুন।
এসিডীয় খাবার কম খান
শরীরের এসিডের মাত্রা কমাতে শাকসবজি, ফলমূল বিশেষ করে টক ফল, রসুন, মধু, অলিভ অয়েল, পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট যেমন তেল, মাছ, মুরগির কলিজা ও টফু খান বেশি করে। এসিড তৈরি করে এমন খাবার যেমন, গরুর মাংস, মুরগির মাংস, শূকরের মাংস, ডিম, দুগ্ধজাত খাবার, ভিনেগার, সয়া সস, মাশরুম, কর্ন, চিনি, অ্যালকোহল, কফি, চিনাবাদাম, পেস্তা খাবেন না। এ খাবারগুলো শরীরে এসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেবে।
কমিয়ে ফেলুন অতিরিক্ত ওজন
‘ওজন কমানোর জন্য পিএইচ-এর রহস্য’ শীর্ষক বইয়ের লেখক ড. রবার্ট ইয়ং মনে করেন, ওজন বাড়তে থাকলে দেহের ভেতরে, বিশেষ করে হিপ ও বাটকে এসিড ও এসিড থেকে সৃষ্ট পদার্থ জমে চর্বি হয়। এতে শরীরের ওজন আরো বাড়তে থাকে। এ সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে ব্যায়াম। ব্যায়াম করলে শ্বাস-প্রশ্বাস গভীর হতে শুরু করে। শরীর থেকে ঘাম ঝরতে শুরু করে। এসবের মাধ্যমে কিন্তু শরীরের অবাঞ্চিত পদার্থগুলো দেহের বাইরে অবমুক্ত হয়ে দেহকে কলুষমুক্ত রাখে। তবে অতিরিক্ত ব্যায়ামও কিন্তু শরীরের জন্য খারাপ। এতে শরীরের ল্যাকটিক এসিড জমা হয়ে শরীরের চর্বির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ব্যায়াম দুচিন্তাকে অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।
দুচিন্তামুক্ত থাকুন
রাগ-ক্ষোভ পাকস্থলীর এসিড নিঃসরণ বাড়িয়ে পেপটিক আলসার ও আলসারেটিভ কোলাইটিস রোগকে বাড়িয়ে দেয়। তাই কমিয়ে ফেলুন মানসিক চাপ। জোর করে হলেও প্রাণখুলে হাসুন। হাসির কোনো বই পড়তে পারেন। ধ্যান করতে পারেন। এত কমবে মানসিক চাপ, বাড়বে আত্মবিশ্বাস।
আকাশপথে পান করুন
বিমানের কেবিনের ভেতরের বাতাস খুব শুষ্ক থাকে। এতে করে অনেকেই পানিশূন্য হয়ে যেতে পারেন। বেড়ে যেতে পারে এসিডের পরিমাণ। প্রতি এক ঘণ্টার যাত্রার জন্য কমপক্ষে এক লিটার পানি পান করুন।