শিশু অটিজমে আক্রান্ত, বোঝার উপায় কী?

অটিজম স্নায়বিক রোগ ও বিকাশজনিত সমস্যা। এর নির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, ক্রোমোজোমের কোনো পরিবর্তনের কারণে অটিজম হতে পারে। আবার গর্ভাবস্থায় বা জন্মের সময় শিশু কোনো ট্রমার মধ্যে পড়লেও অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
একটি শিশু অটিজমে আক্রান্ত কি না সেটি বোঝার উপায় কী, এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৩৯৫তম পর্বে কথা বলেছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আজিজুর ইসলাম। বর্তমানে তিনি আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : শিশুটি অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কখন বোঝা যাবে? তখন করণীয় কী?
উত্তর : অভিভাবকরা একজন শিশুকে নিয়ে যখন আমাদের কাছে আসে, আমরা তখন বেশ কিছু বৃদ্ধির দিক দেখি। মটোর বৃদ্ধি, শারীরিক বৃদ্ধি, সেনসোরি বৃদ্ধি, চিন্তাশক্তির বিকাশে বৃদ্ধি, কথা বলা ও অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনা কিন্তু দেখা হয়। ধরা হয়, অটিজমের লক্ষণ সাধারণত তিন বছরের আগে শিশুর মধ্যে দেখা যায়। তবে বলা হয়, আমার বাচ্চার অটিজম যদি আমি দুই বছর বা এর আগে বুঝতে পারি, তাহলে তাকে ব্যবস্থাপনা করার পদ্ধতিগুলো খুব কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো, দুই বছর বয়সে যদি আপনার বাচ্চা কথা বলতে না শেখে, দুবছরে যদি আপনার বাচ্চা চোখে চোখ না রাখে, দুবছরে আপনার বাচ্চা যদি ডাকলে কাছে চলে না আসে, দুবছরে আপনার বাচ্চার অনুভূতিগুলো যদি প্রবল না হয়, তাহলে কিন্তু একটু বুঝে দেখতে হবে বাচ্চার কোনো সমস্যা হচ্ছে।
প্রশ্ন : পরে এই শিশুটির চারিত্রিক কী বৈশিষ্ট্য ধরা পড়বে? একে চিকিৎসা করা কতটুকু কঠিন হয়ে পড়ে?
উত্তর : আসলে তিন বছরের মধ্যে তো রোগ নির্ণয় করার কথা ছিল। তবে আমরা হয়তো সচেতন ছিলাম না। এ রকম কিছু বিষয় রয়েছে, যেখানে কথা বলাটা একটু ধীরগতির হয়। কিন্তু অটিজমের ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় একসঙ্গে হচ্ছে। যদি সময়মতো চিকিৎসা না হয়, তার প্রশিক্ষণ না হয়, যেমন কথা বলার ব্যাপারে তো তাকে চিকিৎসার ক্ষেত্রে ওষুধ দিয়ে কিছু হবে না। প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
আচরণগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন : সে অতিচঞ্চল হতে পারে, খুব অস্থিরতায় ভুগতে পারে, তার মনোযোগের সমস্যা হতে পারে। অনেক সময় মাথা ঝাঁকায়, হাততালি দিতে থাকে, সে লাফাতে থাকে, একই কাজের পুনরাবৃত্তি করে থাকে, অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে মিশতে পারে না, অনেক সময় নিজে নিজের ক্ষতি করে, কামড়াতে থাকে হাত। দেখা গেল, হাত কামড়ে একেবারে ছিঁড়ে ফেলেছে। রক্ত বের হচ্ছে। কিন্তু তার অনুভূতিগুলো সেভাবে কাজ করে না। এসব আচরণগত সমস্যা থাকতে পারে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এগুলোর পাশাপাশি অনেক সময় অটিজমের বাচ্চাদের খিঁচুনিজাতীয় রোগ হয়। এপিলেপসি, সিজন ডিজঅর্ডার থাকে। এটিও কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। তাহলে তার উন্নতিগুলো আরো থেমে যাবে।
বয়স যত বাড়তে থাকবে, কথা বলার উন্নতিটা তত প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। আমি বলছি, যত তাড়াতাড়ি আমি কথা বলার জন্য প্রশিক্ষণ দিতে পারব, তত তাড়াতাড়ি সুফল পাব।