শিশুর পিঠব্যথার কারণ কী?

শিশুদের পিঠব্যথার সমস্যা ঠিক বড়দের মতো নয়। বড়দের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় শিশুদের পিঠব্যথার সঙ্গে কিছু মারাত্মক সমস্যার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
এটা বিশেষভাবে সত্যি, যদি আপনার শিশুর বয়স চার বা তার বেশি হয় অথবা আপনার যেকোনো বয়সী শিশুর পিঠব্যথার সঙ্গে নিচের উপসর্গগুলো থাকে।
- জ্বর হওয়া কিংবা ওজন কমে যাওয়া
- দুর্বলতা কিংবা অসাড় অনুভূতি
- হাঁটতে সমস্যা
- ব্যথা একপর্যায়ে বা দুপায়ে ছড়িয়ে পড়া
- পায়খানা বা প্রস্রাব করতে সমস্যা হওয়া
শিশুদের পিঠব্যথার কারণ দ্রুত চিহ্নিত করা উচিত এবং তার দ্রুত চিকিৎসা করা উচিত। না হলে তা আরো খারাপ হতে পারে। যদি আপনার শিশুর পিঠব্যথা বেশ কিছুদিন টানা থাকে কিংবা ব্যথা দিন দিন বাড়তে থাকে, তাহলে অবশ্যই শিশুকে একজন অর্থোপেডিক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন।
কারণ
মাংসপেশির টান ও ভারসাম্যহীনতা
ছোট ও বড় শিশুদের পিঠব্যথার সবচেয়ে বড় কারণ হলো পিঠের মাংসপেশির টান। এ ধরনের ব্যথার জন্য বিশ্রাম, ব্যথানাশক ওষুধ ও ব্যায়ামের প্রয়োজন হয়।
অনেক টিনএজ ছেলেমেয়ের পিঠব্যথা দীর্ঘদিন ধরে থাকে। ঊরুর মাংসপেশি শক্ত হয়ে পড়লে এমনটি হয়। এসব ক্ষেত্রে ফিজিক্যাল থেরাপিতে ভালো কাজ হয়।
পিঠ বেঁকে যাওয়া
বয়ঃসন্ধিকালের ছেলেমেয়েদের পিঠব্যথার একটি সাধারণ কারণ হলো পিঠের মাঝখানে বেঁকে যাওয়া। মেরুদণ্ডের কশেরুকা ধীরে ধীরে বাঁকা হয়ে থাকলে পিঠ কুঁজো হয়ে যায়। পিঠের বাঁকা অংশ তখন ব্যথা করে। কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে এ ব্যথা বেড়ে যায়।
মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যাওয়া
বিশেষ করে কিশোরদের এ সমস্যা হয়ে থাকে। যারা ব্যায়াম কিংবা ড্রাইভিং করে কিংবা ফুটবল খেলে, তাদের মেরুদণ্ড বরাবর এদিক-ওদিক মোচড়ানোতে কিংবা মেরুদণ্ড পেছন দিকে নেওয়াতে ছোট ছোট হাড় ভেঙে যেতে পারে।
ব্যথা সাধারণত অল্প হয় এবং এ ব্যথা নিতম্ব ও পায়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। হাঁটাচলা করলে ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। রোগী ছোট ছোট পা ফেলে হাঁটে।
কশেরুকা সরে যাওয়া
যদি নিচের কশেরুকা ঠিক ওপরের কশেরুকা সামনের দিকে সরে যায়, তাহলে পিঠব্যথা করে। এটি সাধারণত মেরুদণ্ডের গোড়ার দিকে হয়। মারাত্মক ক্ষেত্রে হাড় স্পাইনাল ক্যানেলকে সরু করে দেয়। এতে নার্ভের ওপর চাপ পড়ে।
সংক্রমণ
অল্প বয়সী বাচ্চাদের ডিস্ক স্পেসে সংক্রমণ হলে পিঠব্যথা হয়। এ অবস্থাকে বলে ডিসকাইটিস। সাধারণত এক থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের এটি বেশি হয়। ডিস্কে ইনফেকশন হলে নিচের উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে :
- পিঠের নিচের দিকে কিংবা পেটে ব্যথা করে এবং পিঠ শক্ত হয়ে যায়।
- খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে কিংবা রোগী হাঁটতে চায় না।
- মেঝেতে বসার সময় হাত-পা ছড়িয়ে বসে থাকে। সে কোমর বাঁকা করে বসতে চায় না।
টিউমার
কিছু কিছু ক্ষেত্রে টিউমারের কারণে পিঠব্যথা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে অস্টয়েড অস্টিওমা নামক টিউমারের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। মেরুদণ্ডের টিউমারগুলো সাধারণত পিঠের মাঝখানে বা পিঠের নিচের অংশে দেখা দেয়। ব্যথা সারাক্ষণই থাকে, কোনো কোনো সময় ব্যথা বেড়ে যায়। ব্যথা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ করার কোনো সম্পর্ক নেই। এ ব্যথা রাতে বাড়তে থাকে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমাটোলজি বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।