মূত্রতন্ত্রে পাথরের চিকিৎসা

মূত্রতন্ত্রে পাথর একটি জটিল সমস্যা হলেও এর অনেক উন্নত চিকিৎসা এখন করা হচ্ছে। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৩৮৫তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন স্কয়ার হাসপাতালের পরামর্শক ডা. এন আই ভূঁইয়া।
প্রশ্ন : চিকিৎসা কী?
উত্তর : মূত্রতন্ত্রের পাথরটা কোন জায়গায়, কিডনিতে নাকি কিডনির নালিতে, নাকি প্রস্রাবের থলিতে, নাকি প্রস্রাবের রাস্তায়—এর ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা পদ্ধতি।
চিকিৎসক প্রথমে ইতিহাস নেন। তার পর কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেন। এই পরীক্ষায় আমাদের দেশে সর্বাধুনিক পরীক্ষা পদ্ধতি প্রচলিত আছে। বিশ্বমানের সেবা দেওয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন, এর জন্য সব ধরনের পরীক্ষা করাই আমাদের দেশে সম্ভব। যেমন—প্রস্রাবের সাধারণ পরীক্ষা, একটা এক্স-রে করা, একটা আলট্রাসনোগ্রাম করা। কিছু কিছু পাথর আছে, সাধারণ এক্স-রেতে দেখা যায়, কিছু কিছু পাথর আছে দেখা যায় না। সে ক্ষেত্রে আমরা একটি পরীক্ষা করি। এটি সিটি স্ক্যানের একটি অংশ। শুধু কিডনি নালি, মূত্রথলি—এসব জায়গায় কোনো পাথর আছে কি না দেখার জন্য। যেই পাথরগুলো এক্স-রে করে দেখা যায় না, সেটাতেও এগুলো দেখা যায়।
চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ভর করবে অবস্থানের ওপর। কিডনিতে যদি পাথর হয়, এর আকার যদি এক থেকে দুই সেন্টিমিটারের মধ্যে থাকে, তাহলে আমরা বলি এর অবস্থান কিডনি নালির ওপরের দিকে বা মাঝামাঝি। তখন শরীরের বাইরে থেকে এক ধরনের শক ওয়েভ দিয়ে পাথরকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলা যায়।
পাথর যদি এর চেয়ে বড় হয়ে যায়, তাহলে এই পদ্ধতি দিয়ে হবে না। সে ক্ষেত্রে দুটো চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। একটি হলো কিডনির পেছন দিক থেকে ছোট ছিদ্র করে দিই। একটি বিশেষ ধরনের যন্ত্র আছে, ওটা ঢুকালে পাথর পরিষ্কারভাবে টিভি মনিটরে দেখা যায়। সেটা দেখে পাথরটা লেজারের মাধ্যমে ভেঙে দেওয়া হয়। আরেকটি পদ্ধতি আছে, এতে ফুটো করা লাগে না, কাটাও লাগে না। প্রস্রাবের রাস্তার ভেতর যন্ত্র দিয়ে একদম কিডনির নালিতে যাওয়া সম্ভব। এই চিকিৎসাকে বলা হয় আইআরএস। এটা করে যন্ত্রটা ভেতরে নিয়ে গেলে একে টিভির মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে দেখা যায়। এর পর যন্ত্র দিয়ে পাথরকে পরিষ্কার করে দেওয়া যায়। এই সবগুলোই বিশ্বমানের চিকিৎসা।
এরপর আসা যাক কিডনির নালিতে। কিডনির নালিতে একই অবস্থা। বেশি ছোট হলে আমরা দেখি পাথরের আকার কেমন। এবং এই পাথরের কারণে কিডনির নালি বন্ধ হয়ে গেছে কি না, ব্লক হয়ে গেছে কি না। অথবা রোগীর কোনো সংক্রমণ হচ্ছে কি না। যদি না হয়, তাহলে আমরা কিছু ওষুধ দিই, অপেক্ষা করতে বলি। সে ক্ষেত্রে পাথর নিজে নিজেই চলে যেতে পারে। কিন্তু পাথর যদি আকারে বড় হয়, কিডনির নালি আটকে ফেলে অথবা রোগীর জ্বর হয়, ব্যথা রোগী সহ্য করতে না পারে, সে ক্ষেত্রে আমরা পাথর বের করে দেওয়ার পরামর্শ দিই। সেটাও খুব সহজ। পাথর যদি খুব বেশি বড় না হয়, সে ক্ষেত্রে প্রস্রাবের রাস্তায় যন্ত্র দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। এ ছাড়া যদি পাথর আকারে বড় হয়, লেজার দিয়ে করতে সময়সাপেক্ষ হয়, অথবা কিডনির নালি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা মনে করি আমরা; সে ক্ষেত্রে পেট ফুটো করে একটি যন্ত্র দিয়ে ল্যাপারোস্কোপিক মেশিনের মাধ্যমে পাথরকে বের করে দিই।
এরপর বলি প্রস্রাবের থলির পাথর। সেটাও খুব সহজে চিকিৎসা করা সম্ভব। কাটা বা ছেঁড়ার কোনো প্রয়োজন নেই। প্রস্রাবের রাস্তায় যন্ত্র দিয়ে প্রথমে প্রস্রাবের থলিকে দেখা হয়। এর পর অন্য একটি যন্ত্র ঢুকিয়ে পাথরকে গুঁড়া করে বের করে দেওয়া সম্ভব।