পরীক্ষার সময় চাই শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা

একটি পরীক্ষা একটি স্বপ্ন, সাধনা ও সাফল্যের প্রথম ধাপ। একটি পরীক্ষার ফলাফল সারা বছরের পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়ের প্রতিফলন। তবে পরীক্ষার সময়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কিছু সমস্যা হয়। এগুলো পরীক্ষার্থীর ওপর শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রভাব ফেলে।
পরীক্ষার সময়ে ছাত্রছাত্রীদের প্রচলিত যেসব সমস্যা হয়
* পরীক্ষার সময় মানসিক চাপ বাড়ে। এতে খাবারে অরুচি ও অনিদ্রা হয়। পরীক্ষা ভীতি তৈরি হওয়ার কারণে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।
* অনেক সময় চরম অসহায়ত্ব তৈরি হয়।
* মন মেজাজ খিটখিট হয়ে যায়।
* অনেকের আত্মবিশ্বাস কমে যায়। এতে অনেক সময় জানা জিনিসও ভুল হয়।
* শরীরের শক্তি কমে গিয়ে মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব হতে পারে।
* ঘন ঘন প্রস্রাব ও পাতলা পায়খানা হতে পারে।
* পরীক্ষার হলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলা, ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
পরীক্ষার দিন গুলোতে করণীয়
শরীর ও মস্তিষ্কের শক্তি ঠিক রাখুন
আমাদের মস্তিষ্কের প্রধান খাবার হচ্ছে গ্লুকোজ। তাই পরীক্ষার সময়গুলোতে বেশি করে চিনি, মিষ্টিজাতীয় খাবার বেশি করে খান। এতে শক্তি বেশিক্ষণ থাকবে। পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়বে।
৩০ মিনিট বিরতি দিয়ে দিয়ে পড়ুন
গবেষণায় দেখা গেছে, টানা ৩০ মিনিট পড়াশোনা করল, এরপর থেকে মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতা কমতে থাকে। তাই ৩০ মিনিট পর পাঁচ মিনিট বিরতি নিয়ে আবার পড়াশুনা শুরু করুন।
আত্মবিশ্বাস বাড়ান
আত্মবিশ্বাস হচ্ছে সফলতার প্রথম শর্ত। তাই নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস রেখে নিয়মিত পড়াশোনা করুন। পরীক্ষার হলে প্রশ্ন কেমন হবে এই ধরনের চিন্তা করবেন না।
আবেগ বা রাগ নিয়ন্ত্রণ রাখুন
আতিরিক্ত রাগ, আবেগ মস্তিষ্ক থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটায়।
সুষম খাবারের ব্যাপারে যত্নবান হোন
পরীক্ষার সময় পর্যাপ্ত ভিটামিন, মিনারেলযুক্ত শাকসবজি, প্রোটিন ও চর্বি জাতীয় খাবার আপনাকে দীর্ঘক্ষণ শক্তি জোগাতে সাহায্য করবে। তাই না খেয়ে বা কম খেয়ে পরীক্ষা দিতে যাবেন না।
পরীক্ষার হলে যাওয়ার আগে চা, কফি খাবেন না
অতিরিক্ত চা বা কফি মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে যা প্রস্রাব বাড়িয়ে আপনার সময় নষ্ট করবে।
সকালের নাস্তা না খেয়ে পরীক্ষার হলে যাবেন না
সকালের নাস্তায় ডিম, দুধ রাখুন। কারণ এই ধরনের খাবার দীর্ঘক্ষণ শক্তি জোগানোর পাশপাশি প্রস্রাব, পায়খানার গতি কমিয়ে সময় বাঁচায়। পরীক্ষার হলে গলা, মুখ শুকিয়ে গেলে চকলেট বা গ্লুকোজ খেতে পারেন।
অভিভাবকদের প্রতি
* পরীক্ষা নিয়ে আপনার সন্তানকে সব সময় উৎসাহিত করুন। সন্তানের যোগ্যতা অনুসারে তার ওপর প্রত্যাশা করুন।
* পরীক্ষা নিয়ে সন্তানকে অন্যের সাথে তুলনা করবেন না। আপনার অতি-প্রত্যাশা সন্তানের ওপর চাপিয়ে দেবেন না।
* সন্তানের পরীক্ষার সময় বাসায় পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ বজায় রাখুন। সন্তানকে বাস্তব স্বপ্ন দেখান, উৎসাহ দিন। শারীরিক, মানসিকভাবে ফিট করে পরীক্ষার হলে পাঠান।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ, সাভার, ঢাকা।