সন্তানের সুশিক্ষায় অভিভাবকের করণীয়

আমাদের সমাজে অনেকে পরিবারই তাদের পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সন্তানদের সামনেই খোলামেলা কথা বলে থাকেন। এতে করে কখন কোন কথা, কোন জিনিস যে তারা শিখে ফেলে, বোঝা দায়! একই কথা আনন্দবাজার অনলাইনকে বলছেন মনোবিদ মোহিত রণদীপ।
তার কথায়, ‘শিশুরা বাবা-মায়েদের দেখে শেখে। অনুকরণ করে। অভিভাবকের ভাল অভ্যাস, আচরণ যেমন তাদের মধ্যে ইতিবাচক গুণের বিকাশ ঘটায়, তেমনই খারাপ অভ্যাসের প্রভাবও তাদের উপরে পড়ে।’সে কারণেই দেখা যায়, মা-বাবার ভাল, খারাপ দুই আচরণই অজান্তে রপ্ত করে ফেলেছে সে। শিশুর মধ্যে ভাল অভ্যাস গড়তে হলে তাই বাবা-মায়ের আচরণে নজর দেওয়া দরকার, বলেন মনোবিদরা। কীভাবে অভিভাবেকরা সেই দায়িত্ব পালন করবেন?
নিজের কাজ নিজে করা
ছোট থেকেই নিজের কাজ নিজে করার শিক্ষা সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক, বলেন মনোবিদরা। তবে সেই শিক্ষা আলাদাভাবে তাকে দেওয়ার প্রয়োজন হবে না, যদি ছোট থেকে বাবা, মা এবং বাড়ির অন্যদের সে এই ভূমিকায় দেখে। অনেক বাড়িতেই দেখা যায়, শুধু মা কাজ করছেন, বাকিরা তাকে হুকুম করছেন। আবার যে পরিবারে বাবা, মা দু’জনেই কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেন, ঘরের কাজেও পুরুষেরা হাত লাগান, সেখানে সন্তান শিখবে, কাজ সকলের জন্য, নিজেরটা নিজেকেই করতে হয়।
সম্মানের শিক্ষা
বাবা-মা বাড়ির অন্যদের সম্পর্কে কী ভাবেন, কী বলেন, তা কিন্তু লক্ষ করে ছোটরা। বাবা-মায়েরা যে ভাষা ব্যবহার করেন, তা-ই বলতে শেখে সে। এজন্য আলাদা করে শেখানোর প্রয়োজন হয় না। অভিভাবকরা যদি বাড়ির বড়দের সম্মান করেন, নিজেদের মধ্যে শান্তভাবে কথা বলেন, সেভাবেই কথা বলতে, সম্মান করতে শিখবে সে। বাড়ির কার সঙ্গে অভিভাবক কেমন আচরণ করছেন, শিশুর শিক্ষায় এই সব কিছুর প্রভাব পড়ে।
পড়াশোনা
জোর করে নয়, সন্তানকে পড়াশোনা, নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা দেওয়া যায় সহজ ভাবেই। বাচ্চার পড়ার সময় যদি বাবা বা মা নিজেও বই নিয়ে বসেন, তাকে গল্প বলে শোনান, তাহলে শিশু বুঝবে, পড়াশোনা করাটাও জরুরি। বাবা, মাকে অবসরে বই পড়তে দেখলে, তারও কিন্তু বইয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মাতে পারে।
অবসরযাপন
বর্তমান প্রজন্মের মোবাইলে আসক্তি বাড়ছে, যা নিয়ে উদ্বিগ্ন মনোরোগ চিকিৎসক থেকে মনোবিদরা। মোহিত বলছেন, সমস্যার সূত্রপাত কিন্তু অভিভাবকদের থেকেই হতে পারে। সন্তানকে সময় না দিয়ে মা-বাবা মোবাইলে ডুবে থাকলে শিশু সেটাই শিখবে। সন্তানকে সংযত করতে হলে ছোট থেকেই অভিভাবকদের মোবাইল ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। বদলে সেই সময় শিশুকে গল্পের ছলে জীবনের পাঠ দেওয়া যেতে পারে।